বনায়নের নামে দেশজুড়ে ক্ষতিকর বিদেশি গাছের খামার করছে ডেসটিনি

পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে মাটি, পানি, আলো, বাতাস তাদের গুনাবলীর ভিত্তিতে যেখানে যে গাছ জন্মানো সম্ভব; সেখানেই সে গাছ রোপন করতে হবে। আমরা মেহগনি গাছ লাগাইছি। দক্ষিণ আমেরিকার পরিবেশ আমাদের মাটির সাথে তার মিলে গেছে বলে আমরা লাগাইছি। খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশের আম গাছটা দক্ষিণ আমেরিকায় রোপন করলে সেটা সেখানে হবে বিদেশি গাছ।

স্থানীয় যে সব গাছে যে সব প্রাণী বাস করতে পারে, থাকতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে সে প্রাণীই সেখানে আবির্ভাব হয়। এটা হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম। শুধু আমাদের আম গাছে পিপড়া থেকে অনেক প্রাণী বাসা করছে, খাবার জোগাড় করছে। আবার সব গাছে সব পাখি বাসা বাঁধে না, সব গাছের ফল সব পাখি বা প্রাণী খায় না। প্রাণীরা কোথাও বাসা বাঁধে, কোথাও মধু খায়, আবার কোথাও থেকে খাবার জোগাড় করে। বিশ্রাম নেয়। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য হয়।

লক্ষ লক্ষ বছর এভাবে চলে গেছে। যেই গাছ এখানে প্রাকৃতিকভাবে আবির্ভাব হয়েছে, সেই গাছের সাথে মিল রেখে বাস করতে পারে সেই রকম প্রাণীর আবির্ভাবই হয়েছে এ অঞ্চলে। অর্থাৎ হয় একসাথেই। ব্যাপারটাকে আরও সহজ করে বলা যায়, আমাদের গাছ, আমাদের প্রাণী। এমনিভাবে পৃথিবীর সকল জায়গায় যে সকল গাছ জন্মে ঠিক সেই ধরনের প্রাণীরই আবির্ভাব হয় সেখানে। তাই আমাদের গাছ গুলাকে যদি আমরা কেটে ফেলি, তার স্থানে বিদেশী গাছ এনে লাগাই তবে আমাদের প্রাণীরা কোথায় যাবে?

এর আগে আমরা ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান করেছি। দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। কিন্তু আমাদের পাখিরা প্রাণীরা সেই গাছে বাসা বাঁধে না। সেই গাছের ফল, ফুল, পাতা খায় না। অথচ অস্ট্রেলিয়ার যে সকল প্রাণী এই গাছে বাসা বাঁধে, এই গাছের পাতা খেয়ে বাঁচে তা আমরা আনি নাই। তাই বিদেশি গাছ লাগানো যায়। গাছও হবে। হবে কাঠও। কিন্তু প্রানীরা কই যাবে?

এখন সারাদেশে যেই পাউলোনিয়া গাছ কোটি খানেক লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ডেসটিনি, সেই গাছে মধু হয়। কিন্তু মধু হয় এমন গাছ কি আমাদের দেশে নাই? সুন্দর বন থেকে আমাদের গাওয়ালীরা টনকে টন মধু আহরণ করছে। গ্রামে গঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে মৌচাক দেখা যাচ্ছে। তার মানে আমাদের দেশেও উন্নত মানের মধু হয়। আমাদের মৌমাছি আছে। আমাদের প্রকৃতির সাথে যায় সেই মধু বাদ দিয়ে চায়না থেকে মধুর জন্য অন্য গাছ আনতে যাব কেন?

আমাদের বাড়িতে বাড়িতে মধু আছে, মৌ পোকায় বাসা বাঁধছে। এখানকার মাটির সাথে যায় এমন গাছ লাগানো যাবে। কিন্তু আমাদের প্রাণীরা টিকতে পারবে না। বনায়নের নামে সারা বাংলাদেশে তাই বিদেশী গাছেদের ছড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া লতাপাতাও তো গাছ। সেগুলা কাজে লাগে আমাদের। জঙ্গল ছাপ করার নামে লতাপাতা কেটে ফেলা ঠিক না। তার চেয়ে বড়ো কথা; গাছ লাগিয়ে বন তৈরি করা যায় না। যদিও তাকে বনায়ন বলা হয়। কিন্তু এভাবে বন হয় না। বন প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠে। দরকার হল এই বন কে উজাড় হতে না দেয়া।

কোথাও চর জাগলে, মানুষের হস্তক্ষেপ না পড়লে সেখানে সবুজ সবুজ শেওলা জন্মে। এইটা হচ্ছে প্রকৃতির প্রাথমিক পদক্ষেপ। কয়দিন পর সেই শেওলা থাকবে না। লম্বা লম্বা ঘাসের জন্ম নিবে। লতাপাতা হবে, বড় বড় গাছ হবে। এরপর এখানের গাছের সাথে সাথে মিল রেখে সেই রকম প্রাণী আসবে। তিনি বলেন, এখানে একশটা গাছ আছে, একশ দশটা প্রাণী থাকবে। এক একটা গাছের সাথে খাদ্য চক্রের সম্পর্কের জন্যই হরেক রকম প্রাণী থাকবে। কিন্তু এই গাছ কেটে ফেলে ভিন্ন গাছ লাগানো হবে তখন এই একশ দশটা প্রাণী হারিয়ে যাবে।

পাউলোনিয়া গাছ কি পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে আর কি পরিমাণ অক্সিজেন দেয়, সেই হিসাবের কি কাজ? বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে কিভাবে? আগে মরুভূমি ছিল নাকি এটা? এখানে কি প্রাণী নাই? ছিল না? এক সময় মধুপুরে হাতি ছিল। এখন সেই হাতি হারিয়ে গেছে কেন! এখন হাতির কথা কল্পনাও যায় না। সিলেট, চট্টগ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে। সারা বাংলাদেশে গন্ডার ছিল। ময়ূর ছিল। কিন্তু এগুলা নাই কেন? এসব মধু পাওয়া যাবে, অক্সিজেন নির্গত করবে, এরকম নানাবিধ অজুহাতে বন বিভাগ থেকে শুরু করে সবাই বনায়নের নামে বন কেটে বিদেশি গাছের খামার করছে লাগাচ্ছে। সবই তো নষ্ট করেছি আমরা।

ধরেন, এখানে দশটা গাছে দশটা প্রজাতির প্রাণী ছিল। কিন্তু দশ প্রজাতির গাছ কেটে এক প্রজাতির গাছ লাগালেন। তার মানে হচ্ছে নয়টা প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে যাবে। আর যখন সেই গাছটা হবে বিদেশী তখন তো কথাই নাই। আমাদের জঙ্গল গুলাতে হাতি বাঁচত কলা গাছ খেয়ে। কিন্তু যখন বনায়নের নামে কাঠের গাছ লাগালেন তখন সেখানে ছায়া পড়ে গেল। কলা গাছ হল না। হাতিও উধাও হয়ে গেল। ইউক্যালিপটাস, পাউলোনিয়া গাছের পাতাও আমাদের দেশের প্রাণীর খাদ্য না। চায়না থেকে যদি আপনি এ ধরনের গাছ এনে লাগান তখন সেখানে চায়নায় ওই গাছের সাথে খাদ্য চক্রের সম্পর্ক আছে এমন প্রাণীই আনতে হবে আপনাকে। তখন বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না।

বিদেশীরা এক সময় আমাদের পরিবেশ সর্বনাশ করেছে। তারা তারা শাল, গর্জন লাগিয়েছে। কাঠাল গাছ কেটে গাজীপুরে শাল বন করা হয়েছে। অথচ কাঠাল গাছের কাঠ তো খারাপ ছিল না। ব্রিটিশদের সংরক্ষিত বনায়ন দরকার ছিল। কারণ তার এখানে ব্যবসা করতে এসেছে। ওদের ব্যবসার সাথে যায় শাল গাছ। শাল কাঠ। তারপর থেকে এ পর্যন্ত যতপ্রকার সংরক্ষিত বনায়ন হয়েছে সেখানে দেশি গাছের চেয়ে বিদেশি গাছ লাগানো হয়েছে। এটা করে করে আমাদের প্রাকৃতিক বন জঙ্গল হারিয়ে ফেলছি। বাংলাদেশে যে পরিমাণ বন আছে তার আশি ভাগ সংরক্ষিত বনায়ন। যেগুলো আসলে বনই না। এতে জীব বৈচিত্র তো দূরের কথা জীবই থাকবে না। নর্থ বেঙ্গলে ইউক্যালিপটাস লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এইসব বিদেশী গাছ লাগাতে পারেন। কিন্তু প্রাণীর আশা কইরেননা। প্রকৃতির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যেখানে যেটা হয় সেটাই প্রকৃতি। কৃত্রিম গাছ লাগিয়ে প্রকৃতির আশা আপনি করতে পারেন না। কোম্পানিগুলা কিম্বা বনায়ন বিভাগ বলে, গাছ লাগন, পরিবেশ বাচাঁন। কিন্তু গাছ লাগালেই পরিবেশ বাঁচবে না। আমাদের পরিবেশ বাঁচাতে হলে আমাদের গাছ লাগবে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আজ এসব করা হচ্ছে। একদিকে আমরা পরিবেশ বাঁচানোর শ্লোগান তুলছি, বিপরীতে বিদেশি গাছ আনছি। অনেকে বলে, খালি জায়গাতে এই গাছ লাগানো হবে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে কোথাও খালি জায়গা থাকে না। সেখানে পরিবেশের সাথে উপযুক্ত গাছ জন্ম নেবেই।
=====================================
মূল লেখা এখানে আমি শুধু কপি পেস্ট করেছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Categories

Powered By Blogger
abrahamalingkon

Social Icons

Popular Posts

Followers

Featured Posts

asbl. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Copyright © / আসুন আমরা ইভটিজিং বন্ধ করি ।

Template by : Urang-kurai / powered by :ahb