আজকাল লিনাক্স ব্যবহার করাটা সম্মানের বিষয় হয়ে
দাড়িয়েছে। উইনডোজের পাশে লিনাক্স চালাই না বললে টেকি দুনিয়ায় মান সম্মান থাকেনা।
লিনাক্স ব্যবহারকারী কারো সামনে লিনাক্সের নাম নিয়ে দেখেন, হা না করতেই অনেক কিছু গিলে ফেলবেন।
তবে উল্টোটা ঘটেনা তাও নয়। জেনুইন উইনডোজ ইউজারের সামনে উইনডোজকে নিয়ে কিছু বলে
দেখেন, বাকিটা নিজেই বুঝে যাবেন।
তাহলে আসল কথায় আসি, কি এই লিনাক্স যা সবার আলোচনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে?
কি এমন জিনিস যার কদিন আগেও হদিস ছিলনা, কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসেছে? কি আছে এসে যার
গুণে ভক্তরা মুগ্ধ? জানতে হলে আরেকটু পড়তে হবে। অপেক্ষা
করুন।
কি এই লিনাক্স
সহজ কথায় এটা একটা অপারেটিং সিস্টেম। এবার প্রশ্ন হতে
পারে অপারেটিং সিস্টেম কি? নাম দেখেই বোঝা যায় যে যা সিস্টেমকে অপারেট করে তাই অপারেটিং সিস্টেম।
বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম হল মাইক্রোসফটের বানানো উইন্ডোজ। এবার নিশ্চয় কিছুটা
ধারণা এসেছে যে অপারেটিং সিস্টেম মানে উইন্ডোজ জাতীয় কিছু। হ্যা, তবে অপারেটিং সিস্টেম শুধু একটাই তা নয়, কাজের
প্রয়োজনে নানা ধরণের অপারেটিং সিস্টেম তৈরী হয়েছে। আমরা তো পিসি দিয়ে ওয়েব ব্রাউজ
করি, ডাউনলোড করি, গান-ভিডিও দেখি আর দরকার হলে ব্রাশ নিয়ে আঁকিঝুকিতে নেমে পড়ি। কিন্তু যারা
সার্ভার চালায় তাদের কি বসে বসে গান শুনলে চলবে? তাদের চাই
নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম যেটা কোনভাবেই ক্র্যাশ করবেনা। যারা শৌখিন তাদের চাই
আরেকটু ও ফ্যাশনেবল অপারেটিং সিস্টেম। শুধু ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ দিয়েই কি চলবে?
মোবাইল ডিভাইসগুলোর কথাও ভাবতে হবে। তাদেরও চাই আলাদা অপারেটিং
সিস্টেম। তবে মজার ব্যপার হল একটা নির্দিষ্ট জাতের কার্নেল দিয়ে এই সকল ক্যাটাগরির
অপারেটিং সিস্টেম বানানো যায়।
কার্নেল
এইযে আপনি এই স্পেটটি পড়ছেন সেটা কে করছে? ফায়ারফক্স বা ক্রোম বা কোন একটা
ব্রাউজার তাইনা? কিন্তু এই ব্রাউজারটা তো আপনার পিসির
যন্ত্রপাতি মানে মনিটর, প্রসেসর, নেটওয়ার্ক কার্ড - এসব চালাতে পারেনা। পারলে
সেটাই অপারেটিং সিস্টেম হয়ে যেত। তার মানে কিছু একটা আছে যা সকল ডিভাইসকে চালাতে
পারে। এটাই কার্নেল। পিসি চালু হওয়ার সময় কিছুক্ষণ সময় লাগে এই কারণেই। মানে ওই
সময়ের মাঝে সিস্টেম চালাতে যা যা লাগে সব মেমরি বা র্যামে লোড হয়। অর্থাৎ একটা
কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার গড়ে ওঠে প্রসেসর, র্যাম, ডিস্ক, পিসিআই কার্ড ইত্যাদি নিয়ে, আর তার সফটওয়্যার গড়ে ওঠে হার্ডওয়্যারের সাথে নিবিড়সম্পর্কযুক্ত
কার্নেল আর তার উপর চেপে বসা নানা কাজের টুল বা প্রোগ্রাম নিয়ে। তবে অপারেটিং
সিস্টেম ভেদে কার্নেলের স্বাদের পার্থক্য আছে। সময়মত তা বলবো।
ইউনিক্স
তাহলে দাড়ালো যে, লিনাক্স একটা কার্নেল। তবে লিনাক্স যার উপর দাড়িয়ে তার
শুরুটা বছর চল্লিশেক আগের। সালটা ছিল ১৯৬৯। আইফোন আর অন্যান্য জনপ্রিয় মোবাইল
ডিভাইসের জন্য পরিচিত আমেরিকান টেলিফোন এন্ড টেলিগ্রাফ (AT&T নামেই বেশী পরিচিত) কোম্পানির কিছু উৎসাহী
কর্মচারী ইউনিক্স (UNIX) নামের একটা অপারেটিং সিস্টেম
বানান যাদের নাম ডেনিস রিচি, ব্রায়ান কার্নিঘান, ডগলাস ম্যাকেলরয়, কেন থম্পসন আর জো ওসানা। এটা
ছিল অ্যাসেম্বলী ল্যাংগুয়েজে লেখা। অর্থাৎ সম্পুর্ণ লো লেভেল সিস্টেম ছিল। এর মাঝে
ডেনিস রিচি (১৯৪১-২০১১) সি নামের একটা মিড-লেভেল ল্যাংগুয়েজ বানিয়ে
ফেলেন, অর্থাৎ এটা দিয়ে লো লেভেল হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ
করা যেত আবার উচু মানের প্রোগ্রামও লেখা যেত। ১৯৭৩ এর পর থেকে ইউনিক্স সম্পুর্ণ সি
দিয়ে লেখা হয়। ইউনিক্স এর সম্পুর্ণ অর্থ দাড়ায় UNiplexed Information and
Computing Service.
ডেনিস রিচি, যার হাতে জন্ম হয় সি ল্যাংগুয়েজের
১৯৮৩ সালে ডাচ প্রফেসর অ্যান্ড্রু এস টটেনবম
ইউনিক্স থেকে মিনিক্স নামে একটা অপারেটিং সিস্টেম বের করে ফেলেন যেটা আইবিএম
পিসিতে চলত। ইউনিক্সের অনেক শাখা প্রশাখা আছে, আবার ইউনিক্সের
আদলে তৌরী হয়েছে বেশকিছু অপারেটিং সিস্টেম। ইউনিক্সের শাখার অন্যতম একটা হল বিএসডি
বা বার্কলে সফটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউশন। এখান থেকে ওপেন বিএসডি, নেট বিএসডি, ফ্রী বিএসডি ইত্যাদি শাখা বের
হয়েছে। আরেকটা হল নেক্সস্টেপ যা থেকে বের হয়েছে ম্যাক ওহএস টেন (Mac OS X) ও আগের ভার্শনগুলো। তবে এটা বিএসডি‘র মত ওপেন সোর্স নয়। আর বাকি একটা যার নাম না নিলেই নয়
তা হল লিনাক্স যেটা লিনুস তোরভাল্দস এবং রিচার্ড স্টলম্যানের অবদানে এতদূর এসেছে।
সবকিছু হবে ফ্রী
ধরা যাক, দেশে এমন আইন হল যে সবাইকে একই উপায়ে রান্না করা খাবার
খেতে হবে, কেও স্বাদ বা রান্নার উপায় বদলাতে পারবেনা,
বদলানোর চেষ্টা করলে শাস্তি পেতে হবে। এবং খাবার কারো সাথে মজা
করে ভাগাভাগি করা যাবেনা - তাহলে কেমন লাগতে পারে ভেবে
দেখুন তো? ঠিক এমনই বিষয়ে আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য যে
মানুষটি যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তার নাম রিচার্ড স্টলম্যান।
তখন ১৯৮৫ সাল। তিনি এমন মতবাদ চালু করেন যে কম্পিউটার
ব্যবহার করতে হলে সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে। মানুষ হিসেবে
আমাদের যেমন মুক্ত থাকার অধিকার আছে, তেমনি কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদেরও অধিকার আছে
মুক্তভাবে সফটওয়্যার ব্যবহার ও শেয়ার করার। তখন থেকে তিনি ফ্রী ও ওপেন সোর্স
সফটওয়্যারের পক্ষে যুদ্ধ শুরু করেন। কারণ তখন সফ্টওয়্যার চড়া দামে বিক্রী শুরু
হয়েছিল। কিছু মুনাফালোভী ও পুঁজিবাদী দল সফটওয়্যারের সোর্স কোড লুকানো শুরু করল।
এমনকি যারা কোড ঘেটে দেখার চেষ্টা করত কিংবা করতে চাইত তাদের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন
চালু হল। অর্থাৎ পয়সা ছাড়া প্রোপাইটরি সফটওয়্যার ব্যবহারের অধিকার ছিলনা কারোরই। স্টলম্যানের
আন্দোলনে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে এল। তৈরী হয় গনুহ বা GNU. তিনি নিজেই GPL বা জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স
বের করেন যা এখনো ওপেনসোর্স ও ফ্রি সফটওয়্যারের জন্য ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারের জন্য
কয়েকটি টুল (কম্পাইলার, ডিবাগার
ইত্যাদি) তৈরী করেন GNU লাইসেন্সের
অধীনে। এখনো প্রতিদিন প্রচুর সফটওয়্যার বের হচ্ছে জিপিএল লাইসেন্সের অধীনে যার মূল
কথা হল ব্যবহারকারী তার দরকারমত সোর্স কোড পরিবর্তন করতে পারবে এবং তা বিনামূল্যে
বিতরণ করতে পারবে। স্টলম্যানের অবদানে সফটওয়্যার শিল্প নতুনভাবে জেগে ওঠে।
তবে ওপেন সোর্স, ফ্রী এবং ফ্রীওয়্যার - এগুলোর মাঝে
স্পষ্ট পার্থক্য আছে। সফটওয়্যার ডেভেলপ করার লিখিত কোডগুলো যদি উন্মুক্ত থাকে
তাহলে সেটা ওপেন সোর্স। এক্ষেত্রে সফটওয়্যারটি অবশ্যই ফ্রী বা বিনামূল্যে পাওয়া
যায় তবে কিছু নিয়ম মানতে হয়। আর যদি সফটওয়্যারটি ফ্রী হয় কিন্তু কোড লুকানো থাকে
বা নির্মাতা কোড প্রকাশ না করে তাহলে সেটা ফ্রীওয়্যার (এবং
ক্লোজড সোর্স) সফটওয়্যার। আর যদি সোর্স কোড উন্মুক্ত সেই
সাথে কোড ইচ্ছামত বদলে ইচ্ছামত বিতরণ করার সুযোগ থাকে তাহলে সেটা হল ফ্রী
সফটওয়্যার।
মজার ব্যাপার হল স্টলম্যান নিজেও ইউনিক্সের মত একটা
কার্নেল লিখেছিলেন হার্ড (HURD) নামে, কিন্তু দরকারী অপারেটিং সিস্টেমের সাথে
যুক্ত না করায় সেটা হারিয়ে যায়। নব্বইয়ের দশকে গনুহ-কে
এগিয়ে নেওয়ার কাজটি করেন লিনুস নামের এক সোনালী চুলের দুর্দান্ত তরুণ।
সোনালী চুলের সেই ছেলেটি
ফিনল্যান্ডের সেই তরুণ লিনুস তোরভাল্দস (জন্ম: ২৮
ডিসেম্বর, ১৯৬৯) ভর্তি হয়েছিলেন
হেলসিংকি ইউনিভার্সিটিতে। তার দাদা তাকে কিনে দিয়েছিলেন তখনকার ইন্টেল
80386 প্রসেসরযুক্ত একটা কম্পিউটার কেননা লিনুস ছিলেন কম্পিউটার
প্রকৌশলের ছাত্র। তখন ইউনিভার্সিটির ল্যাবগুলোয় চলত ডস, অল্প
কিছু ম্যাক আর ইউনিক্স। সেখানকার প্রফেসর অ্যান্ড্রু এস টটেনবম মিনিক্স নামে
ইউনিক্স আদলের ওএস তৈরী করেছিলেন।
অ্যান্ড্রু এস
টটেনবম
এটা দিয়ে ছাত্রদের অপারেটিং সিস্টেমের ধারণা দেওয়া হত।
তখন মিনিক্স ছিল কড়াভাবে লাইসেন্স করা পণ্য। লিনুস যখন মিনিক্সে কাজ শুরু করেন, তখন পারফর্মেন্স দেখে হতাশ হয়ে
পড়লেন। তিনি বুঝলেন যে মিনিক্স i386 প্রসেসরের সবটুকু
ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারেনা। তাই নিজেই কার্নেল লিখার কাজে নেমে পড়লেন।
সেটা ১৯৯১ এর এপ্রিল মাসের কথা। তখন তো এখনকার মত এত
ব্লগ, ফোরামের বালাই
ছিলনা। সামাজিক যোগাযোগের জন্য ছিল ইউজনেট। লিনুস ছিলেন comp.os.minix গ্রুপের সদস্য। তার মাথায় চিন্তা এল কিভাবে নিজের মডেম কাজে লাগিয়ে
ইউজনেট ব্যবহার করা যায়। তখনই কয়েকমাস খেটে বের করলেন লিনাক্সের 0.0.1 ভার্শন। সেটা কিবোর্ড থেকে ক্যারেকটার পড়তে পারত, এবং সেই সাথে সিরিয়াল পোর্ট থেকে তথ্য মনিটরে প্রিন্ট করতে পারত।
অর্থাৎ মাল্টিটাস্কিং বা মাল্টি থ্রেড এর শুরু তখন থেকেই। দিনটি ছিল ১৯৯১ এর ২৫শে অগাস্ট।
সেই থেকে প্রতিবছর ২৫শে অগাস্ট পালিত হচ্ছে লিনাক্সের জন্মদিন হিসেবে।
লিনুস প্রথম যে ইমেইলের মাধ্যমে লিনাক্স কার্নেলের
ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটা ছিল এমন
-
From:
torvalds@klaava.Helsinki.FI (Linus Benedict Torvalds)
Newsgroups:
comp.os.minix
Subject:
What would you like to see most in minix?
Summary:
small poll for my new operating system
Date: 25 Aug
91 20:57:08 GMT
Organization:
University of Helsinki
Hello
everybody out there using minix –
I’m doing a
(free) operating system (just a hobby, won’t be big and professional like gnu)
for 386(486) AT clones. This has been brewing since april, and is starting to
get ready. I’d like any feedback on things people like/dislike in minix, as my
OS resembles it somewhat (same physical layout of the file-system(due to
practical reasons) among other things). I’ve currently ported bash(1.08) and
gcc(1.40),and things seem to work. This implies that I’ll get something
practical within a few months, andI’d like to know what features most people
would want. Any suggestions are welcome, but I won’t promise I’ll implement
them
Linus
(torvalds@kruuna.helsinki.fi)
PS. Yes –
it’s free of any minix code, and it has a multi-threaded fs. It is NOT protable
(uses 386 task switching etc), and it probably never will support anything
other than AT-harddisks, as that’s all I have .
তখন হয়ত তিনি কল্পনাও করেননি তার বানানো সেই কার্নেল আজ
বিশ্বজুড়ে পরিচিত হবে। তখন থেকে লিনাক্স কার্নেলের উন্নয়নে পৃথিবীজুড়ে হাজার হাজার
ডেভলপার হাত লাগিয়েছেন। ১৯৯১ এর ০.০.১ থেকে ২০১১ এ ৩.২.০ ভার্শনে উন্নীত হয়েছে এই লিনাক্স কার্নেল।
লিনাক্সের প্রচার ও প্রসারের জন্য তৈরী হয় comp.os.linux ও
comp.os.linux.announce নামের ইউজনেট গ্রুপ। ধীরে ধীরে লিনাক্স
শক্তিশালী হতে থাকে। বর্তমানে টপ ৫০০ সুপার কম্পিউটারের ৮২% লিনাক্সে চলে। আর সার্ভারের কথা না বললেও স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই বোঝা যায়
লিনাক্স কতটা জনপ্রিয়।
লিনুস থেকে লিনাক্স, সাথে নাদুস নুদুস পেঙ্গুইন
লিনাক্সের বানানো কার্নেল লিনুসের নিজের নামেই রাখা। তবে
শেষে এক্স আসার রহস্য আছে। লিনাক্স বানানো হয় ইউনিক্স এর আদলে। কাজেই লিনুসের
ইউনিক্স বা Linus’s UniX থেকেই লিনাক্স (Linux) নামটা
রাখা হয়। তবে লিনুস নিজে এই নামকরণ করেননি। তিনি এর নাম রাখতে চেয়েছিলেন
FREAKS. এমনকি লিনাক্সের সোর্স কোডের makefile এ FREAKS নামটিও পাওয়া যায়। যাহোক নামকরণের
কাজটা করেছিলেন অ্যারি লেমকে। তিনি ছিলেন হেলিসিংকি ইউনিভার্সিটির FTP সার্ভারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, সাথে লিনুসের
বন্ধুও। তিনি লিনুসের সাথে পরামর্শ করে কার্নেলের সোর্স কোড FTP সার্ভারে রেখে দেন যেন সবাই সহজেই সেটা ডাউনলোড করতে পারে। অ্যারি
লেমকে Linux নামের একটা ফোল্ডারে সেটা রাখেন। ফলে সেই
নামেই লিনাক্স কার্নেল পরিচিত হয়। সার্ভারটির ঠিকানা হল ftp.funet.fi.
এবার বলি সেই নাদুস নুদুস পেঙ্গুইনের কথা। লিনাক্সের
মাসকট এটা। প্রচলিত আছে যে লিনুস নাকি একবার ছুটি কাটাতে যেয়ে পেঙ্গুইনের কামড়
খান। সেই থেকেই তার মাথায় পেঙ্গুইনের আইডিয়া আসে। তার ভাষ্যমতে “তারা একটা রাগী পেঙ্গুইনকে প্রতি ঘন্টায় ১০০ মাইল বেগে
আক্রমন করতে দেখেনি।” অর্থাৎ লিনাক্সের শক্তিশালী ভাবটা
ফুটিয়ে তুলতেই অতি সাদামাটা এই প্রতীকটি বেছে নেওয়া হয়।
এটা একেছিলেন ল্যারি উইং, তাও আবার ফ্রী ইমেজ টুল গিম্প দিয়ে।
সাদা পেট, কালো শরীর আর হলদে বাদামী ঠোট আর পা ওয়ালা সেই
পেঙ্গুইনের নাম রাখা হয় টাক্স (Tux)
গনুহ আর লিনাক্স
অনেকেই হয়ত খেয়াল করে থাকবেন “GNU/Linux” কথাটির সাথে। যদিও লিনাক্স নামটাই
বেশী ব্যবহৃত হয়, তবুও বেশকিছু ক্ষেত্রে গনুহ/লিনাক্স বলা হয়। আসলে এই ব্যপারটা নিয়ে বিতর্ক আছে। লিনাক্স কি গনুহ এর
অন্তর্গত নাকি গনুহ লিনাক্সের অংশ তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। আসল ব্যপারটা হল,
গনুহ প্রোজেক্ট শুরু হয় লিনাক্স কার্নেল আসার অনেক আগেই। গনুহকে
এগিয়ে নিতে একটা অপারেটিং সিস্টেমের দরকার ছিল, গনুহ টীম
কাজও শুরু করেছিল এটা নিয়ে যার নাম হার্ড (HURD). কিন্তু লিনুস
খুব দ্রুত নিজের লেখা কার্নেল বের করেন এবং সেটার উন্নতি করতে থাকেন। ফলে গনুহের
সাথে লিনাক্স যুক্ত হয় লাইসেন্স জনিত কারণে এবং গনুহ প্রোজেক্টের কিছু টুল ও
পরবর্তীতে সফটওয়্যার কার্নেলের সাথে অপারেটিং সিস্টেম আকারে বের করার উদ্দেশ্যে।
তাই তখন গনুহ+লিনাক্স বা GNU+Linux টার্মটি প্রচলিত হয়। পরে নন গনুহ সোর্স ও টুলস লিনাক্স কার্নেলের সাথে
যুক্ত করে ডিস্ট্রিবিউট করা হয়। তখন শুধু লিনাক্স নামটিই বেশী প্রচলিত হয়। যেমন
বলা যায়, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড লিনাক্স বেজড হলেও এটা গনুহ‘র অধীনে নয়। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে গনুহ না
থাকলে লিনাক্সকে পাওয়া যেতনা। ওদের সম্পর্কটা অনেকটা নিচের ছবির মতই -
গনুহ এর জিপিএল
লাইসেন্সের শক্তিতে লিনাক্স
তারপর কি হল? লিনাক্সের পথচলা থেমে থাকেনি।
সার্ভার আর ওয়ার্ক স্টেশান পেরিয়ে ডেস্কটপ কম্পিউটারেও জনপ্রিয় হচ্ছে লিনাক্স। এর
মূল কারণ বিনামুল্য, মুক্ত অধিকার এবং নিরাপত্তা। তবুও
বাধা বিপত্তি থাকবেই, বিতর্ক চলবেই। কিন্তু লিনাক্স যে
আগামী দিনের বহুল ব্যবহৃত ওএস হতে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পরের পর্বে আপনাদের জানাব লিনাক্সের বিভিন্ন
ডিস্ট্রিবিউশন ও সুবিধা নিয়ে। লিনাক্সের সাথেই থাকুন, স্বাধীন
থাকুন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন