ডেসটিনি : আর একটা বিপর্যয় এর অপেক্ষা ?

শুরু কিভাবে করব বুঝতে পারছি না। "যুবক" এর কথা মনে আছে আপনাদের ? এই যুবক বা যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির ব্যাপারে সরকারে ঘুম ভেঙ্গেছিলো ঘটনা ঘটে যাবার অনেক পরে। হাজার হাজার মানুষ এর হাহাকারের মধ্যে এর পরিসমাপ্তি হয়েছিলো। সেই একই পরিস্থিতি আবারও হওয়ার মত সব উপাদান দেখা যাচ্ছে ! লোভের ফাঁদে ফেলে কর্মক্ষম তরুন সমাজকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ? ফলশ্রুতিতে আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয় সামনে অপেক্ষা করছে ? মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এম.এল.এম. বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং সম্পর্কে আমাদের ধারনা কি পরিষ্কার ? আমার জানামতে যারা একার্যক্রম চালাচ্ছে তারা ছাড়া আরকেউ এসম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখে না। আমার সাধারন বুদ্ধিতে বুঝি এটা একধরনের খেলা। প্রতিটি খেলারই যেমন শেষ আছে এরও শেষ আছে।এ খেলায় তিনটি লেভেলে জয়েন করা যায়। উৎপত্তির সময়, খেলার মাঝামাঝি এবং শেষ দিকে। এ খেলার শুরুতে যারা জয়েন করে তারা সবসময়ই লাভবান। মাঝে যারা জয়েন করে বা করবে তারাও ছিঁটেফোটা লাভবান। কিন্তু শেষে যারা জয়েন করবে তাদের কি হবে তা আর নাই বা বললাম। কিন্তু বিপদের কথা হলো শুরুতে অল্পকয়েকজন দিয়ে যার শুরু শেষে তাই হয়ে যার অগনিত। ডেসটিনির কার্যক্রমও কি কিছুটা যুবকের মত নয় ? যুবকেরও হয়তো বা কিছু হতো না যদি না তারা ব্যাংকিং শুরু করতো। বাংলাদেশ ব্যাংক দেরীতে হলেও ব্যাবস্থা নিয়েছিলো। কথা হলো সরকারের কোন্ বিভাগ ডেসটিনি বা এরমত প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে ? সমবায় অধিদপ্তর থেকে যার শুরু তা কিন্তু এখন আর সমবায় অধিদ্প্তর এর নিয়ন্ত্রণে নেই। মানি আর না মানি এটাই এখন বাস্তবতা। ডেসটিনির ভাষ্যমতে তাদের বর্তমান সদস্যসংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকার কারনে জানি সরকারের ভিতরেও এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে অষ্পষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আর্মির একজন প্রাক্তন জেনারেল এর চেয়ারম্যান বলে এই এমএলএম কোম্পানীর সদস্যারা সবাইকে জানায়। তাঁর নামটি যথেষ্ট ওজনদার হওয়ায় এটা তাদের মার্কেটিংয়ে যথেষ্ট প্রভাব রাখে। যদিও আমি কনফিউজড উনি কি তাদের সকল কার্যক্রম সম্পর্কে ধারনা রাখেন কি না। উনার পোষ্টটা আমার জানামতে মালিকানার সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং বৈতনিক। আরও একটি বিষয় হলো, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান নাকি ২৬ টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানেরও মালিক। ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও তাদের বিনিয়োগ আছে। তারা খুবই সচেতন। মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ যে সবার আগে দরকার তা তারা বুঝেছে ! এবার আমার আজকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি আপনাদের সাথে : দুপুরের পর থেকেই বিকেলটা আজকে একান্ত আমারই ছিলো। বিজয়নগরের চশমার দোকানগুলো ঘুরে চশমার ফ্রেম পছন্দ করছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থায়ই পুরোনো এক বন্ধুস্থানীয়ের ফোন পেলাম। সে দেখা করতে চাইলো। আমি ফ্রি থাকায় তাকে বললাম, আছি তোমাদের অফিসের কাছাকাছি, আসছি। সে যে ডেসটিনিতে কয়েকমাস আগে জয়েন করেছে তার নর্মাল চাকুরীর বাইরে তা আগেই জানি, তাই ওদের সম্পর্কে ওর মুখ থেকেই জানার জন্য তাদের অফিসের দিকে পা বাড়ালাম। সে তার বস্ দুজন এর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারা যথারীতি আমাকে "মুরগি" মনে করে তাদের ননস্টপ বক্তব্য আমার উপর বর্ষন করা শুরু করল। একজনের ১.৮ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তার পদ হলো "পি.এইচ.ডি", আরএকজন ৩.৫ বছর অভিজ্ঞতা নিয়ে "ডায়মন্ড" না কি যেনো বলল আমার মাথার ১০ হাত উপর দিয়ে তা চলে গেল। আমি তাদের বক্তব্যের প্রথম পশলার বর্ষনের পর বললাম, আপনারা এম.এল.এম. বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর ব্যাপারে জানেন ১.৮ বা ৩.৫ বছর থেকে, আর আমি এর সাথে না জড়িয়েও এর সম্পর্কে সামান্য একটু ধারনা রাখি আজ ১০ বছর হবে। তারা আমাকে বলল তাদের নাকি কাজ করেতে হবে ৬ বছর। তারপর তারা পায়ের উপর পা তুলে সারা জীবন পার করতে পারবে। যদিও ভাষাটা এমন ছিলোনা, তবে ভাবার্থ এমনই ছিলো। তাদের সাথে কথা আর না বাড়িয়ে হাত এগিয়ে দিয়ে বললাম পরে কথা হবে। পা বাড়ালাম সেই বন্ধুকে নিয়ে। সে মহা উৎসাহে আমাকে পাশের রেষ্টুরেন্টে নিয়ে নিজে বিল পে করে খাওয়ানোর প্রস্তাব দিলো। আমি সানন্দে প্রস্তাব গ্রহণ করলাম। তার সাথে আলোচনার সারসংক্ষেপ হলো: ৬ মাস হলো সে এখানে জয়েন করেছে। ১ লক্ষ টাকার শেয়ার কিনেছে। ৬ মাসে ১৫০০০ টাকা ডিভিডেন্ট পেয়েছে। তারমানে হলো ৩০ % লাভ ! (ভাবতে পারেন ? )। কমিশন বাবদ এই ৬ মাসে একবার ২৫০০০ টাকা, আরএকবার ২২০০০ টাকা তুলে নিয়েছে। সামনে এরকম আরও লাভ আছে। ২ বছর নাকি কষ্ট করতে হবে। তারপর আর তাকে পায় কে ? সে নাকি কয়েকমাস পরেই "এক্সিকিউটিভ" হবে। তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্ট আছে। আমার কাছেও বিক্রয় করতে চাইলো। আমাকে বললা একটা বায়োক্যাপ নামে একটি ফুড সাপ্লিমেন্ট আছে ১০২০০ টাকা প্যাকেট। যেখানে ১২০ টা ক্যাপস্যুল আছে। প্রতিদিন ২ টা করে খেতে হবে। তাহলে আমি নাকি কি হয়ে যাব। নাইজেলা নামে ৬টি বোতলের এক প্যাকেজ এর দাম ৬৫০০ টাকা । এটা খেলেও নাকি কি সব হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কোন ডাক্তার কি এটি প্রেসক্রাইভ করে ? উত্তরে সে জানালো, না এর জন্য ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন দরকার নেই। তাদের এরকম নাকি কয়েকশ প্রোডাক্ট আছে ! আরও অনেক কথা ................ তাদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা হলো তার মতে ৬৬ লক্ষ ! ভাবতে পারেন এসংখ্যাটি ! এই সংখ্যাটিই খারাপ কিছু ভাবার জন্য যথেষ্ট নয় কি ? জাতি হিসেবে আমরা ঘটনা ঘটার পরে কিভাবে এর সমাধান করা যায় তা নিয়ে ভাবি। আমাদের চোখের সামনে যখন কিছু ঘটতে থাকে তখনও আমরা ভাবি, দেখি না কি হয় ?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Categories

Powered By Blogger
abrahamalingkon

Social Icons

Popular Posts

Followers

Featured Posts

asbl. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Copyright © / আসুন আমরা ইভটিজিং বন্ধ করি ।

Template by : Urang-kurai / powered by :ahb