ডেসটিনি বিপ্লব ২০১২ এবং আমার চোখে ২

কাহিনী ১
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপু থানার চিলমারী ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়ীঘর দেখলেই মনে হবে এলাকার সবাই বুঝি একেবারেই হত দরিদ্র। কিন্তু আসল ব্যাপার হল সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়াই ওখানকার অনেক মানুষই ভারতীয় পণ্যের ব্যবসা করে টাকার কুমির। কিন্তু, পদ্মার ভাঙ্গনের কারণে এক জায়গায় কয়েক বছরের বেশি থাকা যায় না বলে, অধিকাংশ বাড়ী মাটির তৈরী হলেও- প্রায় প্রত্যেক বাড়ীতেই আছে লাখ টাকা দামের মহিষ, নতুন মোটর সাইকেল, সোলার প্লান্টের বিদূৎ ইত্যাদি দামি দামি জিনিস। আচ্ছা সে যাই হোক, সরাসরি আজকের বিষয়ে চলে আসি।

চিলমারীতে যাবার পর থেকে পর থেকে প্রায় জায়গাতেই চুমকি নিয়ে আলোচনা চলতে দেখলাম। তো এত চুমকি চুমকি শুনে আমার পরিচিত একজনের কাছে ব্যাপরটা জানতে চাওয়াই, সে যা বলল তার সারমর্ম হল- এইতো কয়েক মাস আগের ঘটনা। ওদের ওখানে খুব হাইফাই ডেকোরেশনের একটা অফিস হয় (বিশাল বড় আর বড়লোক কেম্পানী) যারা নাকি হাতের কাজ করা জামা-কাপড় বিদেশে রপ্তানী করে। সেই অফিসে সপ্তাহে মাত্র ১ ঘন্টা কাপরে চুমকি বসানোর কাজ করলেই ১০০ টাকা পাওয়া যেত। প্রথম দিকে ঐ অফিসের কাজে এলাকার মানুষ খুব একটা আগ্রহ দেখাই নি। কারণ ওখানে কাজ করবার জন্য ২৫০০ টাকা দিয়ে রেজিট্রেশন করা লাগত। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে যখন এলাকাবাসী দেখল কয়েকজন মানুষ সত্যি সত্যি সপ্তাহে মাত্র ১ ঘন্টা করে কাজ করছে আর ১০০ টাকা করে পকেটে নিয়ে বাড়ী যাচ্ছে, তখন সাধারণ মানুষের ঐ অফিস সম্পকে ভুল ধারনার অবসান ঘটল। কাজেই দেখতে দেখতে শত শত মানুষ ঐ অফিসে কাজ করার জন্য হুমরি খেয়ে পরল। আপনি চুমকি বসানোর কাজ পারেন কি পারেন না সেইটা ব্যাপার না, সপ্তাহে মাত্র ১ ঘন্টা ধরে আপনি চুমকি বসানোর কাজ করলেই আপনাকে দেওয়া হবে ১০০ টাকা। তাই সামর্থ্যবানরা ১০ নামে ১৫ নামে ২০ নামে রেজিট্রেশন করা শুরু করল। কেননা ২০ নামে রেজিট্রশন করলেও আপনাকে সপ্তাহে মাত্র ২০ ঘন্টা কাজ করতে হবে। আর এর জন্য আপনি সপ্তাহে পাবেন দুই হাজার টাকা। আর যারা গরিব তারা ২/৩টা নামে রেজিট্রেশন করে প্রতি সপ্তাহে পাওয়া টাকা জমিয়ে রাখতে শুরু করল যাতে দুই তিন মাস পর নতুন আরেকটা রেজিট্রেশন করতে পারে। আর যাদের প্রতি সপ্তাহেই ২৫০০ টাকার উপর আয় হতে লাগল তারা প্রতি সপ্তাহেই নতুন নামে রেজিট্রেশন করে কোটি পতি হবার দিকে দৌড়াতে লাগল। দেখতে দেখতে কয়েক জন লাখোপতি হয়ে গেল। এবং তাদের টাকা চুমকির অফিসের হিসাবের খাতাতেই আরামে ঘুমাতে লাগল। এমনি ভাবে অন্য দিনের মতই একিদন সকালে কাগজে কলমে লাখোপতি হওয়া কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখা মানুষেরা চুমকির অফিসে আসল ব্যাগার খাটতে। কিন্তু ব্যাপর কি? অফিসেত আসল মালিক পক্ষের কেউই নাই। অফিসত চালাচ্ছে তাদের এলাকারই সে সব মানুষ ওখানে চাকরি নিয়েছিল তারাই-

ব্যাপার কি? ব্যাপার কি???

ধূর, ব্যাপার আবার কি? চরের মধ্যের ভূংভাং অফিসের দাম না হয় কয়েক লাখ টাকা, কিন্তু এই কয় মাসে চুমকির মালিক রেজিট্রেশন বাবদ পেয়েছে কয়েক কোটি টাকা। আর চরের মানুষ যেই খাতার হিসাব দেখে প্রতি রাতে আরামে ঘুমাতে যেত সেই খাতাত আর মালিক চুরি করে নিয়ে যাইনি, কাজেই- ঐ খাতায় জমা হওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা দেখেত চরের মানুষের এখনও ঘুমের কোন প্রকার সমস্যা হবার কথা না।

কাহিনী দুই
ঘটনাকাল আমার ছোটবেলার। কুষ্টিয়ার একটা স্বনামধন্য পেট্রোলপাম্প যার মালিক পক্ষ খুবই প্রভাবশালী উচু বংশের আর অনেক অনেক বড় লোক বলেই পরিচিত। কিন্তু পেট্রোল পাম্পে প্রচুর নগদ টাকার প্রয়োজন হয়। তাই তারা তাদের পরিচিত বন্ধু বা আত্বীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে শুরু করল। এবং তারা যে এমনি এমনি টাকা ধার নিত তা নয়। তেল কেনার টাকা পাঠাবার সময় আপনি যদি তাদেরকে ১ লক্ষ টাকা টাকা ধার দেন তাহলে মাত্র ৩/৪ দিন পরই তারা আপনাকে ১লাখ ২ হাজার টাকা দেবে। কিছু দিন পর নিয়ম করল তাদের ধার নেওয়া টাকার উপর তারা লাখে দিন প্রতি ১ হাজার টাকা করে দেবে।

কয়দিন পর কি হল কনত দেখি?

আসল কাহিনী

শেয়ার বাজারে নতুন কোন কোম্পানী আসলে তা যত অখ্যাতই হোক না কেন, যত টাকার প্রাইমারী শেয়ার ছাড়ে তার কতগুণ বেশি টাকা জমা পরে কনত দেখি? সেসব কোম্পাণী কি যাদের বি ও একাউন্ট আছে তাদের হাতে পায়ে ধরে, নাকি আমরাই আল্লহ্ আল্লাহ্ করে যত বেশি সংখ্যক একাউন্টে সম্ভব টাকা জমা দেই এ্যালোটমেন্ট এর সম্ভাবনা বাড়াবার জন্য।
তাহলে ডেসটিনি কেন শেয়ার বাজারে না এসে লোকজনের পায়ে ধরে, শেয়ার বেচার জন্য।
আবার ব্যাংকগুলো ১৩-১৪% সুদে লোন দেয়া সত্বেও ডেসটিনির মতন এত বড়লোক কোম্পাণী ( তাদের কথা মত) ব্যাংক থেকে লোন না নিয়ে কেন আমাকে ২৫% লাভ দেবে?

আসলে ব্যাংকত আর লোভে পরে লোন দেয় না, যে ডেসটিনির মতন মাকাল কোম্পানীকে লোন দেবে। কিমবা ডি এস সি ও ত মোট সম্পদ না দেখে শুধু ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা দেখেত আর শেয়ার ছাড়ার অনুমতি দেবে না।
তাই ডেসটিনি আগে মলম বেচার নামে আপনার আমার টাকা বের করার জন্য পায়ে ধরত আর এখন কয়েকটা মাত্র ( ৪০ লক্ষ ডিট্রিবিউটরের টাকার অনুপাতে একেবারেই মাত্র) সাইন বোর্ড আর দৈনিক ডেসটিনি, বৈশাখী টিভি চ্যানেল আর কয়েকটা বিল্ডিং দেখায়ে পেট্রোল পাম্প বা চুমকির ব্যবসার মতন টাকা নিয়ে .................................

আর এদের অবস্থাত ঐ পেট্রোল পাম্প কিমবা চুমকির চাইতেও আরো অনেক অনেক বেশি খারাপ খারাপ। কারন কোটি টাকার পেট্রোল পাম্প দেখায়ে ওরা নিছিল বড়জোড় ২/৩ কোটি টাকা। আর ডেসটিনির ডিট্রিবিউটরদের কথা মতই ওদের ডিট্রিবিউটরের সংখ্যা ৪০ লক্ষ তাইলে গরে পাঁচ হাজার টাকা (প্রকৃত গড় আরো অনেক অনেক বেশি হবে) করে ধরলেও মোট, ২০০০০০০০০০০ টাকা। ওরে বাপরে আরো বিস্তারিত হিসাব করতে গেলেত আমার মাথাই হ্যাং করবে রে ভাই।শেয়ার বাবদ লোকজনের কাছ থেকে ওরা যত টাকা নিছে- বৈশাখী চ্যানেল, দৈনিক ডেসটিনি আর অন্যসব হিজিবিজি মিলে বড়জোর তার কত অংশের সম্পত্তি ওদের হাতে অবশিষ্ট আছে রে ভাই!!!!!!

কি আর কব।

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যূ।
(তা বটে, সবারই মরা লাগবে, তবে ডেসটিনি করে বেঁচে থেকেও মরতে চাই না)
ওকে বাই....................

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Categories

Powered By Blogger
abrahamalingkon

Social Icons

Popular Posts

Followers

Featured Posts

asbl. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Copyright © / আসুন আমরা ইভটিজিং বন্ধ করি ।

Template by : Urang-kurai / powered by :ahb