কপালের ভিতর নাই ডেসটিনি-২০০০ লিঃ!

লেখাটা পড়ে অনেকের কাছে মনে হবে এ উদ্ভট কথার মানে কি? আসলে এটা কোন উদ্ভট কথা নয়। এটা ডেসটিনির-ই একজন ডিস্ট্রিবিউটরের কথা। অবশ্য সাধারণ কোন ডিস্ট্রিবিউটর নয়, একজন P.S.D. সাহেবের কথা। তাহলে খুলেই বলি ঘটনাটা।
কিছুদিন আগেও ডেসটিনি সম্পর্কে আমার একটা সমর্থিত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। কেননা আমার পরিচিত অনেক বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশী এর মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং এর আয়ের পদ্ধতি একটু সাধারণ ব্যবসায়ের চেয়ে ভিন্ন হলেও তা নিয়ে আমি তেমন ভাবিনি। কিন্তু সেদিন আমার ডেসটিনি সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে গেছে এর একটি ট্রেনিং সেন্টারে যেয়ে। আমার ফ্রেন্ড হঠাৎ গত শুক্রবারে এসে বলল, তোর তো কোন কাজ নেই, চল আমার সাথে। ডেসটিনির ট্রেনিং সেন্টারে যাব। তুইতো আমাদের মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-এর প্ল্যান কয়েকবার দেখেছিস। এবার চল তোকে ট্রেনিং এ নিয়ে যাই।
ওর এই কথা শুনে আমি বললাম-চল যেয়ে ঘুরে আসি।
সত্যি কথা বলতে কি আমি কয়েকদিন যাবৎ চিন্তা করছিলাম ডেসটিনিতে জয়েন করব।
যাই হোক, ফ্রেন্ডের সাথে চললাম মতিঝিল এলাকায় ডেসটিনির ট্রেনিং সেন্টারে। টিকেটের দাম ২৫০ টাকা। অবশ্য আমার ফ্রেন্ডই সব ব্যবস্থা করে দিল। সেখানে যেয়ে আমার ডেসটিনি সম্পর্কে এক নতুন অভিজ্ঞতা হল। ট্রেনিং-এ সকলকে বক্তৃতা দিলেন ডেসটিনির স্কাইনেট এসোসিয়েটস-এর ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ আজাদ রহমান।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে ডেসটিনি সম্পর্কে এতদিন আমি যা জানতাম তা সম্পূর্ণ ভুল। এতদিন জানতাম যে ডেসটিনির মূল কাজ হল মানুষের মাঝে প্রোডাক্ট সেল করা। কিন্তু ট্রেনিং-এ আজাদ রহমান সরাসরি না হলেও বুঝিয়ে দিলেন যে পণ্য বিক্রি নয়, এক একজন মানুষের টাকা কথার প্যাচের মাধ্যমে আদায় করে ডিস্ট্রিবিউটর বানিয়ে তাকে দিয়ে আরও মানুষ জয়েন করানোই এই কোম্পানীর মূল কাজ। আর এটাকে আজাদ সাহেব একটি হালাল ব্যবসা বলে চালিয়ে দিলেন।
আমি আরো অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে এক্সিকিউটিভ আজাদ রহমান কি চমৎকারভাবে মানুষের মনের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করছেন!
ট্রেনিং-এ তিনি সকলকে প্রথমে উদাহরণ দিলেন কি করে আব্রাহাম লিঙ্কন সাধারণ কাজের ছেলে থেকে আমেরিকার মত দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
কি করে রাস্তার ছেলে থেকে থেকে কোরিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন চে লিও জুং। এবং সবশেষে উদাহরণ দিলেন বাংলাদেশের এক রাখাল ছেলের কাহিণীর। কি করে সেই রাখাল ছেলে আজকের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর মোঃ আতিউর রহমান।
তারপর তিনি বললেন- “তাহলে আপনারা সবাই ডেসটিনির ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ হতে পারবেন না?”
সকলে তুমুল করতালীতে ফেটে পরে বলল যে অবশ্যই পারবে।
এখানে আমি বুঝলাম না যে এসব লোকের জীবন বদলের সাথে ডেসটিনির ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ হওয়ার সম্পর্ক কি? নাকি বর্তমানে ডেসটিনি বড়লোক হওয়ার একমাত্র স্কুল?
একটু পরই বুঝতে পারলাম যে কি সম্পর্ক। আজাদ সাহেব মানুষের মনের গভীরে ঢুকে তাদের মনে আশা দিতে চেয়েছেন যে ডেসটিনি ছিল,আছে এবং থাকবে। তাই এখানে গরুর হাটের মত লোক ঢুকাতে কোন ক্ষতি নেই।
কিন্তু একটা জিনিস কি তারা বুঝেন না? আজ বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৪ থেকে ১৫ কোটি। যেদিন এই সংখ্যার সবাই ডেসটিনিতে জয়েন করবে সেদিন তারা কি সবাই ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ থাকবে এবং সবাই এত টাকা আর ইনসেন্টিভ পাবে?
যাই হোক, এরপর আমার ফ্রেন্ড আমাকে তাদের অফিসে নিয়ে চলল। যেয়ে দেখি বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়েরা অফিস করছে!!
আমাকে ফ্রেন্ডটা তার এক বড়ভাইয়ের চেম্বারে বসিয়ে দিল। ভাইয়ার নাম মোঃ ইমন খান, ডেসটিনির খান এন্ড এসোসিয়েটস-এর P.S.D। বাড়ী ফরিদপুর জেলায়।
ইমন খান আমাকে প্রশ্ন করলেন- “আপনি তো ডেসটিনি সম্পর্কে জানেনই। তাহলে জয়েন করছেন না কেন?”
আমি জবাব দিলাম- “আমার জয়েন করার ইচ্ছা নেই।“
-এটা বললেই তো হবে না। আপনি না জানতেন,তা হলে আপনাকে বুঝিয়ে ঢুকানোর ব্যবস্থা করতাম।
আমি নিরুত্তর রইলাম।
ইমন খান আবার প্রশ্ন করলেন-“কবে ঢুকবেন আপনি?”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম-“৬মাস পরে।”
-এখনি ঢুকে যান না কেন?
-আসলে আমার একটু ফিন্যান্সিয়াল প্রবলেম আছে। তাই আপাতত ঢুকব না।
এবার ইমিন খান তার আসল ব্যবহার শুরু করলেন। বললেন- “আসল কথা কি জানেন? ডেসটিনির পবিত্র ইনকাম আল্লাহ সবার কপালে রাহে না। আপনার কপালেতো আর ডেসটিনি লেখা নাই। আরে মিয়া এম.এল.এম ব্যবসা যে করবে, হেরে ভূতে আইয়ে টেকা দিয়া যাইবে। অবশ্য আমনের কথা বাদ। যে লোক ৫,০০০টেকা যোগাইয়া ঢুকতে পারে না হেয় ডেসটিনির ৫০,০০০টাকা ইনকামের যোগ্য না। আমার কথাডা মাইন্ডে নিয়েন না,ঠিক আছে?”
আমি বললাম- “দেখেন,আমি আপনার কথা শুনতে এসেছি। আপনাকে কিছু বলতে আসি নি। তাই আপনার কথা আমি আপাতত কানে নিচ্ছি না। আপনার কথা আপনার কাছেই থাকুক।”
বলে আমি বেরিয়ে আসলাম।
প্রধান দড়জার কাছ দিয়ে আসতে যেয়ে আমি আরেকটা দৃশ্য দেখলাম যা আমার কাছে বেশ খারাপ লাগল।
একটা ছেলেকে ডেসটিনির এক ডিস্ট্রিবিউটর কাঁধ ধরে ঝাকাচ্ছে আর বলছে- “ওই মিয়া, ফরম সাইন আপ করাইলেন আর প্রোডাক্ট কিনবেন না। ফাইজলামি করেন না? ফরম ফিলাপ করে আপনি তারপরে এখান থেকে উঠবেন।”
এ সময় একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল। মেয়েটা এসে মিষ্টি কন্ঠে বলতে লাগল-“ফয়সাল ভাইয়া প্লিস ফরমটা পূরণ করেন। আপনি না এখানে আসার সময় আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে আপনাকে যেখানেই নিয়ে যাই আপনি সেখানে যেয়ে আমার কথা শুনবেন।”
ছেলেটা কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে ৬,০০০টাকা বের করে দিল।
এবার ডিস্ট্রিবিউটরের ভাষা বদলে গেল। “Thank You মিঃ ফয়সাল। আপনি এখন ডেসটিনির একজন সম্মানিত ডিস্ট্রিবিউটর হলেন।
ছেলেটা কিছু বলল না। মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে এল।

যাই হোক, কয়েক দিন আগে আমাদের দেশের বাড়ী থেকে আমার ফুফা-ফুফু এলেন। তারা এসে আমাকে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন- “তুমি দিসটিনি নামে কুনো কম্পানীর নাম হুনছ?”
আমি জবাবা দিলাম- হ্যাঁ,কেন?
তারা বললেন- “আমগোরে দিসটিনিতে ঢুকাইসে দেশের বাড়ির এক পরিচিত লোক।”
আমিতো অবাক হয়ে গেলাম তাদের এ কথা শুনে। তারা আমাকে অনেক কিছু বললেন। সকলের থেকে শুনে এবং নিজের অভিজ্ঞতায় আমি ডেসটিনি সম্পর্কে যা জানতে ও বুঝতে পেরেছি তা মোটামুটি এরকম-

১. ডেসটিনি-২০০০ লিঃ সর্বপ্রথম সরকারী মহল ও উপরের লোকদের পকেটে ভরে স্বার্থ আদায় করে নিচ্ছে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে।
২. এ কোম্পানী তাদের বাহ্যিক চাকচিক্য দিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে এবং কোম্পানীতে জয়েন করার উৎসাহ দিচ্ছে।
৩. তারা বাঙালীকে টাকা-পয়সা এবং ধন-সম্পদের লোভ দেখিয়ে কোম্পানীতে জয়েন করাচ্ছে।
৪. কেউ যদি তাতেও জয়েন করতে না চায়, তাহলে তাকে বলছে যে এই কোম্পানীতে অমুক বিখ্যাত লোক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত কিংবা অভিনেতা আছে।
৫. ডেসটিনির এত সব কথায়ও যদি কারো মন না গলে তবে তাকে বলছে- “ধূর মিয়া, ডেসটিনির পবিত্র ইনকাম আপনার কপালে নাই।” কিংবা “আপনি এই ফরম যখন পূরণ করেছেন তখন অবশ্যই আপনাকে প্রোডাক্টটা কিনতে হবে।”
৬. কেউ যদি বলে যে ডেসটিনিতো পালিয়ে যাবে। তখন তাকে বলা হচ্ছে ডেসটিনি গ্রুপ অব কোম্পানী। কাজেই সে লস খেলে তার সাথে যুক্ত অপর একটা কোম্পানীর সাহায্য নিয়ে ব্যবসা চালানো হবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই যে, ডেসটিনির যতগুলো গ্রুপ কোম্পানী আছে সবগুলোরই নামই ডেসটিনি। কাজেই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গ্রুপ অব কোম্পানীর নাম দিয়ে আসলে ডেসটিনিই ব্যবসা চালাচ্ছে।
৭. ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এ কেউ জয়েন করতে গেলে বলা হয়- “আপনার ভাগ্য ভাল,তাই জয়েন করতে পেরেছেন। সামনের কয়েক মাস পর থেকে গ্রাজুয়েট ছাড়া ডেসটিনিতে জয়েন করা যাবে না। যদি তাই হয়, তাহলে কি করে আমার ফুফা-ফুফুর মত অজ পাড়াগাঁইয়ের অশিক্ষিত লোকদের জয়েন করানো হল। যারা স্মার্ট তারাই সাধারণ মানুষকে জয়েন করাতে হিমশীম খাচ্ছে। তাহলে গ্রামের লোকেরা এ অবস্থায় কি করে অপরকে জয়েন করাবে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে ডেসটিনি তাদের মত অশিক্ষিত লোকদের থেকে শুধু মাত্র কিছু আদায়ের জন্যই জয়েন করাচ্ছে। তাদের টাকায় ডেসটিনির হোমরা-চোমড়ারা বিনোদন করছে।
৮. কেউ যদি ডেসটিনির নামে কোন রিপোর্ট দেয়, তাহলে ডেসটিনি বলে যে এটা তারা করেনি বরং কোম্পানীর কিছু অসাধু ডিস্ট্রিবিউটর কিংবা এক্সিকিউটিভ করেছে। অথচ ওই ডিস্ট্রিবিউটর কিংবা এক্সিকিউটিভকে কিন্তু ডেসটিনিই নাকি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর কোম্পানীতে জয়েন করিয়েছে।।
৯. ডেসটিনির সবচেয়ে বড় সম্পদ হল নারী!! কারণ নারীরা পারে পুরুষ মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের দিকে ঝুঁকাতে। এই জিনিসটা ডেসটিনি খুব ভালোভাবেই বেছে নিয়েছে। আমার এক কলেজের বান্ধবী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) আমাকে জানাল যে তার আপলাইনের বড় ভাই তাকে দায়িত্ব দিয়েছে বেশী করে কলেজের ছাত্রদের পটিয়ে পটিয়ে ধরে আনতে যারা হন্য হয়ে পার্ট টাইম জব খুজছে।
১০. ডেসটিনির মূল হোতাদের কারণে এদের ঠগবাজি বন্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ এরা অর্থ এবং শেল্টার দিয়ে কোম্পানীকে টিকিয়ে রাখছে। ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট লেঃ জ়েঃ হারুন-অর-রশিদ এবং চেয়ারম্যান রফিকুল হকের নামে কাগজে কয়েকবার লেখালেখি হলেও তা নিয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের নীরবতার রহস্য বোধহয় এবার প্রকাশ হচ্ছে। কারণ আমার যতদূর মনে হয় যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর মোঃ আতিউর রহমান এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই ডেসটিনি যদি কোন কারণে অর্থ সঙ্কটে পড়ে, তাহলে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন বিশেষ ক্ষমতাধারী লোকের মাধ্যমে তার অর্থ তহবিল যে বজায় থাকবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যে কারণে ডেসটিনির পতন আশা করলেও তা সম্ভব হবে না।

এসব লেখা পড়ে ডেসটিনি কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ হয়তো প্রতিবাদ করবেন যে এইসব লেখা বানোয়াট এবং কোম্পানীর শত্রু পক্ষ তাদের ক্ষতির জন্য লেখেছে। আসলে যুগটা এমন হয়ে গেছে যে এখন আর মিথ্যা বলার জন্য প্রতিবাদ করা হয় না। বরং সত্য বলার জন্য তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়।

সুতরাং দেশের সকল স্তরের মানুষ বিশেষ করে যুব সমাজের তরুণ-তরুণীদের অনুরোধ করা যাচ্ছে যে তারা যেন সহজেই এসব টাকা-পয়সা কিংবা সম্পদের লোভের শিকার না হয়। ডেসটিনির মত আরো অনেক কোম্পানী তাদের এরকম ঠগবাজির ব্যবসা শুরু করেছে। যেমন- নিউ ওয়ে, ই লিঙ্ক, দি নিউট্রিশিয়ান ফার্মেসী কোং লিঃ ইত্যাদি।
আমার পরবর্তী লেখায় আমি আরো বিস্তারিতভাবে প্রমাণসহ এসব কোম্পানীর বর্তমান কার্যক্রম তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।

বিঃদ্রঃ মন্তব্য কিংবা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে। নং- ০১৯১৭ ৫৯২ ০৪১
log on mp3 song http://www.bdsongghar.blogspot.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Categories

Powered By Blogger
abrahamalingkon

Social Icons

Popular Posts

Followers

Featured Posts

asbl. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Copyright © / আসুন আমরা ইভটিজিং বন্ধ করি ।

Template by : Urang-kurai / powered by :ahb